ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একটি দেশ হলো সার্বিয়া। এ দেশটি বর্তমানে বাঙ্গালীদের আগ্রহের কেন্দ্রই অবস্থান করে। ইতোমধ্যে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে সার্বিয়া পাড়ি জমিয়েছেন এবং অনেকে সার্বিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনিও যদি তাদেরই একজন হন তাহলে সার্বিয়া যাওয়ার উপায় জেনে নিয়ে আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যান।
কিভাবে সার্বিয়া যাওয়া যায়
সার্বিয়া যাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোন এজেন্সি সরাসরি সাধারণত সার্বিয়ার ভিসা দেয় না। সার্বিয়ার ভিসা পাওয়ার জন্য এজেন্সি ফেস করতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশ সার্বিয়ার কোন এম্বাসি বা দূতাবাস নেই। এখনো পর্যন্ত যারা সার্বিয়া গিয়েছেন তারা ভারতের নয়া দিল্লিতে থাকা সার্বিয়ার দূতাবাসের সাহায্য নিয়েই গিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে কথা বলেছেন এবং সেনজেনভুক্ত সকল দেশে যাওয়ার জন্য প্রাথমিক আবেদন যেন বাংলাদেশ থেকেই করা যায় সে সম্পর্কে উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করা যায় 2025 সাল থেকে বাংলাদেশ থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সেনজেন দেশগুলোর ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে।
সার্বিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সার্বিয়া প্রতি বছর হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকের কিছু অত্যাবশ্যকীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় যা তাকে সার্বিয়ায় কাজ করার জন্য যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করে। সাধারণত সার্বিয়ায় বাঙালিরা কাজ, ভ্রমণ, শিক্ষা এবং ব্যবসা সহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব বিষয় সাধারণত এজেন্সিরাই পূর্ণ ধারণা দিয়ে দেয়। তবে সাধারণত সার্বিয়া যেতে যে সকল কাগজপত্রগুলো হর হামেশাই প্রয়োজন হয় সেগুলো হলঃ
- ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদী একটি পাসপোর্ট
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চাইলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ পত্র এবং নিজের হাতে লেখা কভার লেটার
- ওয়ার্ক পারমিট বা শ্রমিক ভিসায় যেতে চাইলে কাজে দক্ষতার সনদপত্র
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে)
- BMET কার্ড
- মেডিকেল টেস্টের সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
যদি এর বাইরে কোন কাগজপত্র লাগে তাহলে আপনার এজেন্সি অবশ্যই আপনাকে অবগত করবে। যদি আপনার উপরে উল্লেখিত কাগজগুলো তৈরি থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই অনলাইনে সার্বিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে এবং আবেদনপত্রসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে সার্বিয়া এম্বাসিতে অ্যাপয়েন্টমেন্টে গিয়ে জমা দিতে পারেন।
সার্বিয়ার ভিসা পেতে কত দিন লাগে?
যদি আপনারা আবেদনপত্র সকল কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে তাহলে সার্বিয়ার ভিসা পেতে গড়ে চার থেকে ছয় মাসের মত সময় লাগে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এর চেয়ে কম বা একটু বেশি সময়ও লাগতে পারে। কপাল ভালো থাকলে আরো অনেক আগেই সার্বিয়ান ভিসা পেয়ে যেতে পারেন।
সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে
এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার এজেন্সির উপর। নির্ভর করে বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যেতে ঘরে প্রায় সাত থেকে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। তাই এজেন্সির সাথে খুব ভালো করে কথা বলে নিন এবং যত সম্ভব কম টাকায় যাওয়ার চেষ্টা কর। কেননা সার্বিয়া যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে টাকার পরিমাণ বেঁধে দেয়া নেই। আপনার কাছ থেকে এজেন্সি গুলো যত টাকা সম্ভব বেশি নেওয়ারই চেষ্টা করবে।
সার্বিয়া বেতন কত
৪ সেপ্টেম্বর 2024 একটি সরকারি গেজেটে সার্বিয়া প্রজাতন্ত্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদ 2025 সালের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে যা ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
এখানে সার্বিয়ার কর্মীদের প্রতি ঘন্টায় ন্যূনতম বেতন ধরা হয়েছে ৩০৮ সার্বিয়ান দিনার যা গত বছর ছিল ২৭৮ সার্বিয়ান দিনার। এবছর প্রতি ঘন্টায় শ্রমিকদের বেতন আগের তুলনায় 13.7% বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ন্যূনতম বেতনের পরিমাণ কাজের উপর নির্ভর করে সারা বছর নিম্নরূপে পরিবর্তিত হতে থাকবে। প্রতি মাসে কত কর্ম ঘন্টা কাজের জন্য সার্বিয়ায় 2025 সাল থেকে কি পরিমাণ বেতন পাওয়া যাবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
- 160 কর্ম ঘন্টা (ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর) – 49,280.00 দিনার;
- 168 কর্ম ঘন্টা (মার্চ, জুন এবং আগস্ট) – 51,744.00 দিনার;
- 176 কর্ম ঘন্টা (এপ্রিল, মে এবং সেপ্টেম্বর) – 54,208.00 দিনার;
- 184 কর্ম ঘন্টা (জানুয়ারি, জুলাই, অক্টোবর এবং ডিসেম্বর) – 56,672.00 দিনার।
তাহলে উপরের তথ্য অনুযায়ী সার্বিয়ায় একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন হবে ৭৮,৮৪৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন হবে ৯০,৬৭৫ টাকা। আর যারা বিভিন্ন কাজে পারদর্শী তাদের বেতন তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী হবে। এক্ষেত্রে কারো কারো বেতন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা হতে পারে।
source: https://ceelegalmatters.com/
সার্বিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি
অন্যান্য দেশের মত সার্বিয়ায় শ্রমিকের চাহিদা অনেক বেশি। দক্ষ শ্রমিক হলে তার চাহিদা অন্যান্য শ্রমিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও ড্রাইভার, প্লাম্বার নির্মাণ শ্রমিক হোটেল বা রেস্টুরেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন কনস্ট্রাকশন সাইটের কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, এছাড়াও আইটি বিশেষজ্ঞের বিশেষ চাহিদা রয়েছে সার্বিয়ায়।
সার্বিয়ার এক টাকায় বাংলাদেশের কত টাকা
সার্বিয়ার মুদ্রার নাম হল দিনার। আজকের টাকার মান অনুযায়ী ১ সার্বিয়ান দিনারে বাংলাদেশের ১ টাকা ০৬ পয়সা হয়। অর্থাৎ সার্বিয়ার ১ দিনার = ১.০৬ টাকা।
মনে রাখবেন:
ইউরোপের নাম করে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিসা জালিয়াতির শিকার হয়। তাই প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এজেন্সির শরণাপন্ন হবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন এজেন্সির সাহায্য না নিয়ে সব কাজ একা একাই করে নিতে পারেন।
FAQ’S:
সার্বিয়ার ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
সবকিছু ঠিক থাকলে সার্বিয়ার ভিসা পেতে চার থেকে ছয় মাস লাগে।
সার্বিয়ার এক টাকায় বাংলাদেশের কত টাকা?
সার্বিয়ার এক টাকায় বাংলাদেশের একটা কাজ ছয় পয়সা।
বাংলাদেশে কি সার্বিয়ার এমব্যাসি আছে?
এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সার্বিয়ার কোন এম্বাসি নেই।