১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য

বিজয় শব্দটির সঙ্গেই রয়েছে মুক্তির আনন্দ। আর সেই বিজয় যদি হয় দীর্ঘ শাসনের নামে শোষণের বিরুদ্ধে তবে আনন্দের উল্লাস সকল বাঁধ ছাড়িয়ে যায়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল ছিল বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে পবিত্রতম দিন। কেননা দীর্ঘ শোষণের পর বাঙালি জাতি তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছিল এক ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা।

বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তুতি

তথ্য সংগ্রহঃ

বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রস্তুতি গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এজন্য 16 ডিসেম্বর সম্পর্কে যাবতীয় সকল ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী এবং শহীদদের নাম মনে রাখতে হবে।

বক্তব্যের কাঠামোঃ

এই অংশে অবশ্যই শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করতে হবে। তথ্যবহুল আলোচনার সাথে সাথে চমৎকার উদাহরণ দিয়ে সব ঘটনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে।

আত্মবিশ্বাসী থাকাঃ

বক্তব্য দেয়ার সময় প্রচুর আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এজন্য বক্তব্য দেয়ার আগের দিন আইনার সামনে কয়েকবার বক্তব্যের অনুশীলন করা যেতে পারে।

এদিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ প্রায় সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।  এই সব অনুষ্ঠানে বিজয় দিবসের মহান কীর্তি কথা অর্থাৎ বক্তব্য দিতে হয় দিতে হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও বক্তব্যে অংশগ্রহণ করে থাকেন। যদিও এই দিনটি সম্পর্কে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না তারপরেও এই দিনকে আরো বেশি আনন্দময় করতে এবং সবার সামনে এই দিনের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা যেতেই পারে। এ কিছু নমুনা নিচে দেয়া হলোঃ

১৬ই ডিসেম্বর এর বক্তব্যের মূল বিষয় মূল বিষয়

  • ১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয় দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা
  • মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস 
  •  মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা।

১৬ই ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয় দিবসের তাৎপর্যঃ

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতীক। একই সাথে এই দিনটি বাঙালি জাতির বহু ত্যাগের প্রতিনিধিত্ব করে। দীর্ঘ নয় মাস রক্ত ক্ষয়েই যুদ্ধের পর আমরা এই দিনটিতে স্বাধীনতা অর্জন করি। এই স্বাধীনতা অর্জন করার পথ মোটেও সহজ ছিল না। 30 লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের আজকের স্বাধীনতা। আজ আমরা স্বাধীন দেশের মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার যে সুযোগ পাচ্ছি এর জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব সেই সকল সূর্যসন্তানদের যারা নিজেরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু একসময় এদেশে এমন ছিল না। আমাদের সব সময় সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। একটি পরাধীন জাতিই বোঝে স্বাধীনতার মর্ম

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসঃ

পাকিস্তানের দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি 1971 সালের 25 শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়। নিশংস হত্যাযোগ্য চালায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। তাদের নৃশংসতার মধ্যে কেউ ছাড় পায়নি। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের ওপর পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং এতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এত অত্যাচারের পরেও বাঙালিকে দমানো যায়নি। তারা মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে দীর্ঘ নয় মাস জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভেঙে নতুন দুই রাষ্ট্রের জন্ম হয়-ভারত ও পাকিস্তান। আবার দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এক ভাগ ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ এবং আরেক ভাগ ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। তারা ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতিকে অবাক করে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। জেনে রাখা ভালো তখনও পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশিরভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলতো। তখন ওদের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালি চুপ করে থাকেনি। ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে রাস্তায় নামে এবং মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে রক্ষা করে। মূলত এরপর থেকেই পাকিস্তানের বাঙালিবিদ্বেষের চূড়ান্ত সূচনা ঘটে। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে তারা ব্যাপকভাবে বাঙ্গালীদের কে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। এ সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের বেশি মূল্যায়ন করা হত এবং একসময় তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির বিজয়ের পরেও তারা পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। 1947 সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত একের পর এক অন্যায়ের ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতি একসময় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নয় মাস রক্ত হয়ে যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়। আর তারপর থেকেই স্বাধীন এই ভূখণ্ডের নাম হয় বাংলাদেশ।

শহীদদের স্মরণ:

সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ সহ ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজ আমরা পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। বহু নারীর বহু ত্যাগের ঘটনা মিশে আছে আমাদের এই স্বাধীনতায়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা আমাদের শহীদদের বলিদান এর কথা ভুলবো না। তার আমি সে রবে বাংলার আকাশে বাতাসে। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বর্গতুল্য দেশ পেয়েছি , এই দেশের স্বাধীনতাকে আমরা আমাদের প্রাণের বিনিময়ে রক্ষা করব এবং প্রাণ ভরে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করব।

উপসংহার

এই পর্বে শ্রোতাদের মনে একটি ইতিবাচক বার্তা রেখে আসতে হবে। যেমনঃ প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর একটি শক্তিশালী বার্তা নিয়ে আসে যা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এরপর স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিয়ে দেশকে আরো উন্নত করার সংকল্প নিয়ে বক্তব্য শেষ করতে হবে।

Leave a Comment