ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল রুটে প্রতিদিন যাতায়াত করা হাজার হাজার যাত্রীর জন্য ট্রেন একটি অন্যতম ভরসার মাধ্যম। যারা এই রুটে নিয়মিত চলাচল করেন তাদের প্রায় সবাই জানেন সঠিক সময়ে ট্রেন ধরতে পারলে যাত্রা হয় আরামদায়ক, নিরাপদ এবং খরচও হয় অনেক কম। ২০২৫ সালের আপডেটেড সময়সূচী ও ভাড়ার তথ্য জানতে চান? তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন এই রুটটি এত গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা এবং টাঙ্গাইলের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা রেলপথটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। যারা প্রতিদিন অফিস, শিক্ষা কিংবা ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বা টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন তাদের জন্য ট্রেন যাত্রা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে উপযোগী। শুধু আরামদায়ক বলেই নয় বরং সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তার জন্যও ট্রেনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
যেকোনো উৎসব বা ছুটির সময় যেমন ঈদ, পূজা কিংবা সরকারি ছুটিতে এই রুটে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই সময় সঠিক সময়সূচী জানা ও টিকিট সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।
ঢাকা ও টাঙ্গাইলের দূরত্ব এবং ট্রেন যাত্রার বিশেষ সুবিধা
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। এই পথটিতে ট্রেন যাত্রা করলে গড়ে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা। তুলনায় বাসে যাতায়াতে সময় বেশি লাগে। কারণ ঢাকা শহরের যানজট প্রতিনিয়তই এই পথে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বাসের ভাড়া তুলনায় বেশি এবং আরামের দিক থেকেও ট্রেন যাত্রা অনেক এগিয়ে।
আরো পড়ুন- কমলাপুর টু টাঙ্গাইল ট্রেনের সময়সূচী ২০২৫
প্রতিদিন এই রুটে একাধিক আন্তঃনগর, মেইল এবং কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। যাত্রীরা নিজেদের সময় ও প্রয়োজনে উপযোগী ট্রেন বেছে নিতে পারেন। নিচে ২০২৫ সালের সময়সূচী তুলে ধরা হলো।
আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের সময়সূচী (আপডেটেড)
ট্রেনের নাম | ঢাকায় ছাড়ার সময় | টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর সময় | সাপ্তাহিক ছুটি |
---|---|---|---|
একতা এক্সপ্রেস | সকাল ৬:৫৫ | সকাল ৮:৪৫ | মঙ্গলবার |
দ্রুতযান এক্সপ্রেস | সকাল ৮:০০ | সকাল ৯:৪৫ | বুধবার |
তুরাগ এক্সপ্রেস | সকাল ৭:৩০ | সকাল ৯:১৫ | বৃহস্পতিবার |
সুবর্ণ এক্সপ্রেস | বিকেল ৪:৩০ | সন্ধ্যা ৬:১৫ | রবিবার |
আরো পড়ুন- ফেনী থেকে কক্সবাজার ট্রেন ভাড়া ২০২৫
মেইল ও কমিউটার ট্রেনসমূহের সময়সূচী
ট্রেনের নাম | ঢাকায় ছাড়ার সময় | টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর সময় | সাপ্তাহিক ছুটি |
---|---|---|---|
টাঙ্গাইল কমিউটার | সকাল ৯:০০ | সকাল ১১:০০ | নেই |
ঢাকা মেইল | দুপুর ১:৩০ | বিকেল ৩:৩০ | নেই |
আরো পড়ুন-সৈয়দপুর টু কক্সবাজার বিমান ভাড়া ২০২৫
সাপ্তাহিক ছুটির তথ্য
বেশ কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট দিনে চলাচল করে না। তাই টিকিট কাটার আগে এই তথ্য জানা জরুরি। উপরের টেবিলে প্রতিটি ট্রেনের বন্ধের দিন উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা টু টাঙ্গাইল ট্রেনের ভাড়া তালিকা ২০২৫
ভাড়া যাত্রীর জন্য অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। ঢাকা টু টাঙ্গাইল রুটে বিভিন্ন শ্রেণির টিকিট পাওয়া যায়। যাতে ভিন্ন ভিন্ন যাত্রীর চাহিদা পূরণ হয়। নিচে ২০২৫ সালের হালনাগাদ ভাড়া উল্লেখ করা হলো।
বিভিন্ন শ্রেণির টিকিটের ভাড়া
শ্রেণি | ভাড়া (টাকা) |
---|---|
শোভন | ৫০ |
শোভন চেয়ার | ৬৫ |
স্নিগ্ধা | ১০০ |
এসি সিট | ১২৫ |
এসি স্নিগ্ধা | ১৩০ |
এসি কেবিন | ১৫০ |
মনে রাখবেন: উৎসবের সময় বা বিশেষ দিবসে কিছু ট্রেনের ভাড়ায় সামান্য পার্থক্য হতে পারে। এছাড়া অনলাইনে টিকিট কাটলে ছোট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ যোগ হতে পারে।
কোথায় এবং কীভাবে টিকিট পাবেন?
বর্তমানে টিকিট কাটার পদ্ধতি অনেক সহজ হয়েছে। আপনি নিচের যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন:
- রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: eticket.railway.gov.bd
- রেল সেবা অ্যাপ: Android ও iOS ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য (প্লে স্টোরে পাবেন)
- স্টেশন কাউন্টার: সরাসরি গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করা যায়
টিকিট কাটার পরামর্শ:
ঈদ ,পূজা বা যেকোনো ছুটির সময় টিকিট কাটুন আগেভাগে টিকিট কাটুন যেন পরবর্তীতে কোন ঝামেলা না পোহাতে হয়। কারণ এই সময়গুলোতে মাঝে মাঝে টিকিটের স্বল্পতা দেখা যায়। টিকিট কেনার সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন। অনলাইনে পেমেন্টের জন্য বিকাশ/নগদ ব্যবহার করা যায়।
ট্রেন ভ্রমণ সহজ ও নিরাপদ করার কিছু উপায়
যাত্রার সময় যাত্রীদের করণীয়
- মূল্যবান জিনিসপত্র চোখের সামনে রাখুন
- অপরিচিত কারও কাছ থেকে খাবার গ্রহণ করবেন না
- সব সময় আসনের টিকিট সঙ্গে রাখুন
- যদি শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি সঙ্গে থাকে, তাদের দিকে খেয়াল রাখুন
ভ্রমণের আগে কী প্রস্তুতি নেবেন?
আপনার সাথে পর্যাপ্ত পানি ও হালকা খাবার রাখুন। এটি আপনার যাত্রার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে। আপনার সাথে চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন যেন আপনার মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ না হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী নিন। শীতকাল হলে একটি হালকা জ্যাকেট রাখুন।
উপসংহার
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল রুটে ট্রেনে যাত্রা মানেই নিশ্চিন্ত, আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী ভ্রমণ। যারা প্রতিদিনের ব্যস্ততা থেকে একটু স্বস্তির যাত্রা খুঁজছেন তাদের জন্য এই ট্রেন সেবা আদর্শ। নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সময়সূচী জানা থাকলে ট্রেন যাত্রা হবে আরও সহজ। এই তথ্যগুলো আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজ করবে।
মানুষ আরো জিজ্ঞেস করে-প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কীভাবে কাটবো?
রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা রেল সেবা অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেন।
২. ভাড়া কি সব ট্রেনে একই রকম?
না, ভাড়া নির্ভর করে ট্রেনের ধরণ ও আসনের শ্রেণির উপর। উৎসবে ভাড়ায় সামান্য পার্থক্য হতে পারে।
৩. ঢাকা থেকে কোন স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ে?
বেশিরভাগ ট্রেন ছাড়ে কমলাপুর স্টেশন থেকে। কিছু ট্রেন তেজগাঁও ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকেও ছাড়ে।
৪. ট্রেনে ভ্রমণের সময় কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, টিকিট ও মূল্যবান জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল থাকুন। অচেনা কারও কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবেন না।
৫. কতদিন আগে টিকিট কাটতে পারি?
সাধারণত ট্রেন ছাড়ার ৫ দিন আগে অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন।