লটারির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারিভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া হয়। পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। তাই প্রতি বছর দক্ষিণ কোরিয়ার লটারি বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে। কোরিয়ার বেতন কত, কিভাবে যাওয়া যায়, কত বছর থাকা যায়, কত টাকা বেতন পাওয়া যায়, কত বছর পর পর কোম্পানি চেঞ্জ করা যায় এবং সেখানে জীবন যাত্রার মান কেমন সকল বিস্তারিত দেওয়া আছে এই প্রতিবেদনে।
কোরিয়া লটারি সার্কুলার ২০২৫
২০২৫ সালের কোরিয়া লটারির তারিখ এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে অনুমান করা যায়,২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে লটারির তারিখ প্রকাশিত হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বেতন কত: ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানির বেসিক বেতন ধরা হয়েছিল বাংলাদেশী টাকায় এক লক্ষ আশি হাজার টাকা। এছাড়াও ওভারটাইম ডিউটি করার সুযোগ থাকে। যদি নিয়মিত ওভারটাইম ডিউটি করা যায় তাহলে মাস শেষে বাংলাদেশী টাকায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা উপার্জন করা যায়।
কিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায়: দক্ষিণ কোরিয়া বেশ কয়েক ভাবে যাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মাধ্যম হলো- স্টুডেন্ট ভিসায়, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ কর্মী হিসেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো সাধারণ কর্মী হিসেবে বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ লটারি এবং ভাষা পারদর্শিতার মাধ্যমে কোরিয়া গিয়ে থাকে। ২০২৪ সালের দেশটি বাংলাদেশ থেকে ৪৩ হাজার কর্মী নেওয়ার ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে ভাষা পারদর্শিতায় ৩০৬৫২ জনএবং লটারির মাধ্যমে ১২৪০০ জনের কোটা ছিল। বেসরকারি কোন এজেন্সির মাধ্যমে কোরিয়া যাওয়া যায় না।
কোরিয়া যেতে কি কি লাগে: কোরিয়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা। কোরিয়া যাওয়ার মোট পাঁচটি ধাপ রয়েছে- ভাষা পারদর্শী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, স্কিল টেস্ট, কালার ব্লাইন্ড টেস্ট, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স । এ ধাপগুলো পার হতে পারলে ভিসা ইস্যু প্রক্রিয়া চালু হবে। তবে ন্যূনতম শিক্ষা যোগ্যতা হিসেবে একটি এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হবে সরকারের রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের মাধ্যমে।
কয় বছর থাকা যায় ও কোম্পানি পরিবর্তনের নিয়ম: ইপিএস এর আওতাভুক্ত হয়ে কোরিয়ায় কাজের ভিসায় গেলে সাধারণত চার বছর দশ মাস থাকা যায়। এই চার বছর দশ মাসের মধ্যে আপনি চাইলে আপনার কোম্পানি পাঁচ বার পরিবর্তন করতে পারবেন। পরিবর্তন করার একটা বিশেষ নিয়ম রয়েছে।প্রথম তিন বছরে তিনবার এবং পরবর্তী এক বছর দশ মাসে দুইবার কোম্পানি পরিবর্তন করা যায়।
কোরিয়ার বেশিরভাগ কোম্পানিতে কাজের ধরন একই হয়ে থাকে। তাই কোম্পানি পরিবর্তন না করাই শ্রেয়। কেননা কোম্পানি পরিবর্তন করলে ওই কোম্পানি আর পুনরায় বাংলাদেশের কর্মী নিতে চায় না। তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে কোম্পানির পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত না নেয়াই ভালো।
কোরিয়া যেতে খরচ,সেখানকার টাকার মান : বাংলাদেশ থেকে বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। এর সাথে পরে বিমান ভাড়া ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা যুক্ত হয়। এগুলো ব্যতীত বোয়েসেল এর কাছে কিছু টাকা জামানত রাখতে হয়। সর্বমোট দুই থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়।
কোরিয়ার মুদ্রার নাম উওন। কোরিয়ার থেকে বাংলাদেশের টাকার মান বেশি। ১টাকা= ১১.৬৮ উওন। বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার দূরত্ব ৩৮২৭ কিলোমিটার।
কোরিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জীবনযাত্রাঃ কোরিয়া একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। কোরিয়ায় জীবন যাত্রার মানও তাই অনেক বেশি উন্নত। বেশিরভাগ কোম্পানি শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করে থাকে। কিছু কোম্পানি থাকা খাওয়া বাবদ কিছু অর্থ চার্জ করে। যদি সব মিলিয়ে বেতন আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা পাওয়া যায় তাহলে সবশেষে দেশে দুই বা আড়াই লক্ষ টাকা পাঠানো যায়। বেড়ানোর জন্য কোরিয়ায় রয়েছে অতি চমৎকার কিছু দর্শনীয় জায়গা। দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ অত্যন্ত মিশুক স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা খুবই অতিথি পরায়ন। তাই তাদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কখনোই তিক্ত হয় না। সব মিলিয়ে সেখানে সুন্দর এবং উন্নত জীবন যাপন করা যায়।
কোরিয়া সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন-
লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায় ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়া কৃষি কাজের ভিসা ২০২৫
দক্ষিণ কোরিয়া স্টুডেন্ট ভিসা ২০২৫