ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকের মনেই গাঁথা থাকে। কিন্তু সেনজেন ভিসা পাওয়া এবং তার প্রক্রিয়া অনেকের জন্য জটিল ও ব্যয়বহুল হতে পারে। অথচ ইউরোপে এমন বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেগুলো এখনও সেনজেন চুক্তির আওতাভুক্ত নয়। এই দেশগুলোতে ভ্রমণ করা তুলনামূলক সহজ, খরচ কম এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর। আজকের লেখায় আমরা এই নন-সেনজেন দেশগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তুলে ধরবো এবং জানবো কেন এসব দেশ আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে।
🔗 সম্পর্কিত লিংক: IELTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায় ২০২৫
সেনজেন চুক্তি কী এবং এর তাৎপর্য কী
সেনজেন চুক্তির মূল ধারণা
সেনজেন চুক্তি ১৯৮৫ সালে ইউরোপের কয়েকটি দেশ একত্র হয়ে স্বাক্ষর করেছিল যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের দেশের মধ্যে ভ্রমণ আরও সহজ করে তোলা। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপের ২৭টি দেশ তাদের মধ্যে সীমান্ত কন্ট্রোল সরিয়ে দিয়েছে। ফলে একবার এই অঞ্চলে প্রবেশ করলে আলাদা ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায়।
ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধা
এই চুক্তির কারণে ইউরোপে ট্রাভেল করার ক্ষেত্রে অসাধারণ সুবিধা পাওয়া যায়। সেনজেন অঞ্চলে একবার প্রবেশ করলেই আপনি স্পেন থেকে ফ্রান্স, ফ্রান্স থেকে জার্মানি—এসব দেশে কোন ঝামেলা ছাড়াই যেতে পারবেন। তবে কিছু দেশ এখনও এই চুক্তির আওতায় নেই, এবং সেগুলোই আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়।
🔗 সম্পর্কিত লিংক: বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম ২০২৫
নন-সেনজেন দেশগুলোর তালিকা
সেনজেন অঞ্চলের বাইরে থাকা দেশগুলো মূলত ইউরোপের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত। নিচে অঞ্চলভিত্তিক তালিকা দেওয়া হলো—
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো
- যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড)
- আয়ারল্যান্ড
এই দুই দেশ সেনজেনের বাইরে এবং তাদের নিজস্ব ভিসা নীতিমালা রয়েছে। ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য পুরোপুরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেনজেন থেকে আলাদা হয়েছে।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো
- বুলগেরিয়া
- রোমানিয়া
- সার্বিয়া
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
- আলবেনিয়া
- উত্তর মেসিডোনিয়া
- মলডোভা
- ইউক্রেন
দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো
- মন্টেনিগ্রো
- কসোভো
এই দেশগুলো ইউরোপীয় মানদণ্ডে উন্নয়নশীল হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সংস্কৃতির দিক থেকে ভীষণ সমৃদ্ধ।
🔗 সম্পর্কিত লিংক: ইউরোপের কোন দেশের ভিসা সহজে পাওয়া যায় বিস্তারিত ২০২৫
নন-সেনজেন দেশে ভ্রমণের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
যা আপনাকে আকর্ষণ করবে
- সহজতর ভিসা প্রক্রিয়া: অধিকাংশ নন-সেনজেন দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম জটিল। কিছু দেশে সেনজেন বা ইউএস ভিসা থাকলেই আপনি বিনা ভিসায় প্রবেশ করতে পারবেন।
- কম খরচে ভ্রমণ: হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন—সব খরচই সেনজেন অঞ্চলের তুলনায় অনেক কম। যাদের বাজেট কম, তারা নির্দ্বিধায় এসব দেশ বেছে নিতে পারেন।
যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে
- সীমান্ত নিয়ম ভিন্ন: প্রতিটি দেশে আলাদা ইমিগ্রেশন নীতি থাকে, তাই প্রতিবার সীমান্ত অতিক্রমের সময় পাসপোর্ট চেক এবং অনুমতি নিতে হয়।
- এক দেশ থেকে আরেক দেশে সহজে যাতায়াত সম্ভব নয়: সেনজেন অঞ্চলের মতো এক দেশ থেকে অন্য দেশে ফ্রি ট্রাভেল সম্ভব নয়। আপনাকে আলাদা ভিসা লাগতে পারে।
এই দেশগুলো কেন আপনার ভ্রমণ তালিকায় থাকবে
ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক আকর্ষণ
সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, বুলগেরিয়া বা উত্তর মেসিডোনিয়ার মতো দেশগুলোতে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, পর্বতশ্রেণী, সমুদ্র সৈকত ও দূর্গ। এই দেশগুলোর প্রতিটি শহর যেন ইতিহাসের গল্প বলে। আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন, তবে মন্টেনিগ্রোর উপসাগর কিংবা আলবেনিয়ার সমুদ্রসৈকত আপনার মন জয় করবেই।
সংস্কৃতি ও কম ভিড়ের মিশ্রণ
সেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় এসব দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ফলে আপনি আরও সহজে স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারবেন। তাদের উৎসব, খাবার, সংগীত এবং আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
উপসংহার
নন-সেনজেন ইউরোপীয় দেশগুলো এখন অনেক ভ্রমণকারীর প্রিয় তালিকায় উঠে আসছে। কারণ, এই দেশগুলোতে খরচ কম, মানুষ আন্তরিক, প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান প্রচুর এবং অনেক সময় ভিসা পাওয়াও সহজ। আপনি যদি ভিন্ন ধাঁচের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাহলে এই দেশগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
🔗 সম্পর্কিত লিংক: পর্তুগালের সর্বনিম্ন বেতন কত ২০২৫
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
১. নন-সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে কোন দেশ ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়?
সার্বিয়া, আলবেনিয়া, মন্টেনিগ্রো ইত্যাদি দেশে যদি আপনার সেনজেন, ইউকে, বা ইউএস ভিসা থাকে তবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা যায়।
২. সেনজেন ভিসা নিয়ে কি আমি নন-সেনজেন দেশে যেতে পারি?
কিছু দেশে আপনি সেনজেন ভিসা নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন, তবে সব দেশে না। ভ্রমণের আগে নির্দিষ্ট দেশের ভিসা নীতিমালা জেনে নিন।
৩. নন-সেনজেন দেশে ভ্রমণে খরচ কেমন?
এগুলো সাধারণত বাজেট-ফ্রেন্ডলি দেশ। হোস্টেল, লোকাল খাবার ও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অনেক সস্তা।
৪. এসব দেশের নিরাপত্তা কেমন?
অধিকাংশ নন-সেনজেন দেশ পর্যটকদের জন্য নিরাপদ, তবে স্থানীয় আইন ও সামাজিক রীতিনীতি মানা জরুরি।
৫. আমি কি এই দেশগুলোতে ইংরেজি ভাষায় চলতে পারবো?
হ্যাঁ, শহর ও পর্যটক এলাকা গুলোতে সাধারণত ইংরেজি চললেও কিছু কিছু স্থানে স্থানীয় ভাষার কিছু সাধারণ শব্দ জানা ভালো।